নামজারি বাতিলের আবেদন ফরম

আমরা অনেক সময় জমি ক্রয় করার পর অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে মনে করি জনিত আমার হয়ে গেছে এখন আর নামজারি করার প্রয়োজন নেই। অথবা আমাদের বাঙ্গালীদের অনেকের এমন বিষয়টি হয়ে থাকে যে ঘোড়া কিনতে পারে কিন্তু ঘোড়ার চাবুক কেনার সামর্থ্য থাকে না। অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে সেই জমিতে নামজারি করার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু জমজমের দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে যাওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমির নামজারি অর্থাৎ জমি খারিজ করে নিতে হয় নিজের নামে। তা না হলে অনেক ধরনের জটিলতা হতে পারে। কারণ জমি বিক্রির পর জমির মালিক সে জমি পুনরায় আরেকজনকে বিক্রি করতে পারেন বা বিক্রি করেন তখন নানান জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া জমির মালিকের উত্তরাধিকারী কর্তৃক বিকৃত জমি দ্বিতীয় বার বিক্রি করেন। তখন একই জমির দুইটি দলিল হয়ে যায়। একটি রেজিস্টার দলিল অন্য টি নামজারি খতিয়ান। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি বড় সমস্যা হল ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি ও নামধারী খতিয়ান দুইটি দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এই কারণে প্রায়সী এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসিল্যান্ড বা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি বা এসিল্যান্ড প্রদত্ত নামদারী খতিয়ান নিজ উদ্যোগে বা কারো আবেদনের প্রেক্ষিতে সেটি বাতিল করে দিতে পারেন। এটিকে এসিল্যান্ড কর্তৃক রিভিউ বলা হয়। স্টেট একিউজেসন এন্ড টেনান্স ১৯৫০ এর ১৫০ ধারা বলে তিনি এই রিভিউ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ভূমি মামলায় এ ধরনের মামলা কে মিস মামলা বলা হয়ে থাকে। এবার আমাদের জানতে হবে এই মিস মামলা কিভাবে করা যায়।

এই মিস মামলা করার জন্য অবশ্য একজন ভূমি বিশেষজ্ঞের বা আইনজীবীর প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে সহকারী কমিশনার ভূমির অফিস বা ভূমি অফিসের নামধারী খতিয়ান বাতিল করার জন্য আবেদন করতে হয়। এখানে কফি বাবদ ২০ টাকা দিয়ে বাদী এবং বিভাগের নাম তফসিলভুক্ত সম্পত্তির বর্ণনা এবং নামজারীর ফলে আপনার কি ধরনের সার্থক ক্ষুন্ন হচ্ছে এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে লিখে আবেদন জমা দিতে হবে। এবং আবেদনপত্রের সাথে অবশ্যই রেজিস্ট্রি দলিল ও সংযুক্ত করে দিতে হবে।

এরপর আবেদন পত্র দেখে সহকারী কমিশনার ভূমি বা এসিলেন্ট যদি আবেদন পত্রটি গ্রহণ করেন তাহলে তিনি বিবাদী বরাবর নোটিশ পাঠাবেন। নোটিশ পাঠাবেন এই মর্মে যে আপনারা বা আপনি আগামী এত তারিখে বিরোধী সম্পত্তির পক্ষে দলিল পত্র নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিস এ হাজির হবেন। অবশ্য তিনি চান্দের বিষয়টি নিশ্চিত হবেন এবং সেখানে একটি মিস কেস নম্বর দিবেন। সরকারি কমিশনার (ভূমি) এর দেওয়া তারিখে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন তিনি এরপর দলিলপত্র পরীক্ষা করবেন।

এসিল্যান্ড উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রয়োজন হলে সার্ফেয়ার বা তফসিলদার কে উক্ত জমির মালিকানা বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলবেন। এরপর সার্ভেয়ার বা তহশিলদার সরজমিনে তদন্ত করে এসিলেন বরাবর তদন্ত রিপোর্ট জমা দিবেন। উক্ত তদন্তরী পথ হাতে পাওয়ার পর এসিল্যান্ড উভয় পক্ষের সাথে বসে তার বক্তব্য শোনাবেন। পুনর শুনানি শেষে তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে এসেছিলেন বা সহকারী কমিশনার ভূমি রায় ঘোষণা করবেন। রায় যদি প্রথম মালিকের পক্ষে আসে তাহলে পূর্বের নাম জারি বাতিল করে তার নামে নাম জারি হবে। তাহলে আপনারা বুঝতে পারলেন যে একটি জমির নামজারি যদি হয়ে যায় তাহলে সেটিকেও বাতিল করা যায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। কারণ এ ধরনের বিষয়টি আমরা আমাদের সমাজের আশেপাশে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখে থাকি।

তাই আমাদের উচিত হবে যে এ ধরনের জটিলতায় না গিয়ে জমি ক্রয় করার সঙ্গে সঙ্গেই নামজারির বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ ঘোড়া কিনে আর ঘোড়ার চাবুক কিনতে পারছে না এরকম ভাষায় না বসে থেকে অবশ্যই জমির দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে নামজারির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।