বাংলাদেশের প্রতিটি ভূমি কারো না কারো মালিকানায় রয়েছে। হয়তো কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা কোন সংস্থার মালিকানাধীন। তাই যে সকল ভূমিগুলো কোন না কোন মালিকের অধীনে রয়েছে তাদেরকে খাস জমি বলা হয় না। আর যে সকল জমিগুলো কোন সংস্থার মালিকানায় থাকে না অর্থাৎ সরকারের কালেক্টরের মালিকানায় থাকে বা হয়ে যায় সেগুলিকে খাস জমি বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও আমরা দেখতে পাই সরকারের যে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে যেমন রেল মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সড়ক ও জনপদ বিভাগ এগুলির সংস্থার আলাদা আলাদা ভূমি রয়েছে। তাই খাওয়ার জমি সরকারের মালিকানায় থাকলেও সেটি সরকারের কোন সংস্থার মালিকানায় থাকে না এই জন্য সেই সকল জমিকে খাস জমি বলা হয়ে থাকে।
এছাড়া আমরা বললাম যে বিভিন্ন সংস্থার অর্থাৎ সরকারেরই বিভিন্ন সংস্থার নামে যে জমিগুলি রয়েছে সেগুলিকে খার জমি বলা হবে না যেমন বাংলাদেশ সড়ক ও জনপদ বিভাগের অনেক ভূমি রয়েছে সেগুলি কখনো খাস জমি নয়। সেই জমিগুলো অবশ্যই সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন রয়েছে এবং তারাই সেই জমিগুলো বা ভূমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। আমরা জানি জমিগুলো সাধারণত সরাসরি সরকারের মালিকানাধীন থাকে অর্থাৎ কোন সংস্থার মাধ্যমে নয় সরাসরি সরকারের মালিকানাধীন সেই জমিগুলোকে খাস জমি বলা হয়ে থাকে।
অর্থাৎ আরো ভালো করে বললে বলা যায় যে যে সকল জমিগুলো কালেক্টরের নামে রেকর্ড করা হয় বা কালেক্টর সাহেবের নামে রেকর্ড হয়ে থাকে সেই জমিগুলোকেই খাওয়ার জমি বলা হয়। জেলা প্রশাসক বা ডিসি যখন জমি জমার হিসাব নিকাশের জন্য কাজ করে থাকেন তখন তাকে কালেক্টর বলা হয়। অন্যান্য সংস্থার অর্থাৎ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নামে যে ভূমিগুলো রয়েছে সেই ভূমিগুলোকে আমরা কখনোই খাস জমি বলে উল্লেখ করবোনা।
আমরা দেখি যে যে জমিগুলো যে সংস্থার নামে থাকে ওই জমিগুলোর মালিক ওই সংস্থায়ী হয়ে থাকে। বাংলাদেশে আমরা এই ধরনের অনেক জমিজমা দেখেছি যেগুলো সরকারি জমি হওয়া সত্ত্বেও আলাদা আলাদা মালিকানাধীন রয়েছে। এবং সেই সকল আলাদা আলাদা সংস্থা তাদের ভূমিগুলো মালিকানা জাহির করার জন্য অনেক সময় বিভাগের সৃষ্টি হতে আমরা দেখেছি। তাই সরকারের ওই সংস্থাগুলোর মালিকানায় যে জমিগুলো রয়েছে সেই জমিগুলোকে খাস বলা চলে না। সেগুলি অবশ্যই মালিক রয়েছে।
আর জমির ক্ষেত্রে কোন ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নামে থাকা ভূমিগুলোকে অবশ্যই উন্নয়ন কর দিতে হয়। বাংলাদেশের আইনে বলা হয়েছে যে কোন জমি যদি সরকারের হাতে ব্যস্ত থাকে ও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে সেগুলিকেই খাস জমি বলা হয়ে থাকবে। পরবর্তীতে এই খাজ জমি গুলো সরকার আবার বন্দোবস্তও দিতে পারেন যাকে আমরা বাংলা ভাষায় বন্দোবস্ত বললেও ইংরেজি ভাষাটা আমাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য তা হলো লীজ দেওয়া।
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেনান সি এক্ট্রেস ছিয়াত্তর ধারা অনুযায়ী জমির বর্ণনা দেওয়া রয়েছে। এবং সেখানে বলা হয়েছে যে কোন ভূমি যদি সরকারের হাতে নষ্ট হয় এবং সেই জমিগুলো যদি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে তাহলে সরকার সেই ভূমি গুলি সরকার কর্তৃক প্রণীত পদ্ধতি অনুযায়ী বন্দোবস্ত দিতে পারবেন অথবা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করতে পারেন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। এবং এই সকল জমিকেই খাস জমি বলা হয়ে থাকে। খাস শব্দটি যদিও ফারসি একটি শব্দ এর অর্থ একান্ত আপন বা নিজস্ব বা নিজের।
এজন্য মুখ খোলা আমলে খালি শাহ ও জায়গীর এই দুই ধরনের জমি ছিল। মুঘল সম্রাট এই খালিশা জমি নিজেই দেখাশোনা করতেন এবং সেই জমিকেই আসলে খাস জমি বলা হয়। সেখান থেকেই খাস জমির বা খাস নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এবং আরো বলা হয় যে সম্রাটের ব্যক্তিগত খরচ মেটানোর জন্য কিছু আলাদা করে এ সকল জমির রাখা হতো বলে এগুলির নাম পড়েছিল খাস জমি।