যেকোনো সরকারের একটি বড় আয়ের উৎস হল খাজনা গ্রহণ বা খাজনা থেকে আসা অর্থ। এ কারণে প্রতিটি জনগণকে অবশ্যই ভূমি সংক্রান্ত হোক বা অন্যান্য যে কোন বিষয়ে খাজনা দিতে হয়। এই কারণে অর্থনীতিতে খাজনা শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে থাকে। এবং গুরুত্বের সাথেই খাজনা শব্দটি উচ্চারণ করা হয় বা দেখা হয়। খাজনা বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি তা হলো মূলধনীয় দ্রব্য সামগ্রী যেমন ভুমি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কল কব্জা বাড়িঘর ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য আমাদেরকে মালিক কে যে অর্থ দিতে হয় বা এগুলি ব্যবহার করার জন্য মালিক কে প্রদত্ত অর্থই হলো খাজনা। যেমন ভূমি ব্যবহার করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই সরকারকে খাজনা প্রদান করতে হয়।
এই খাজনা প্রদান অবশ্য সেই মুঘল আমল থেকে চলে আসছে। তারা অর্থাৎ তখনকার রাজ কর্মচারীরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকায় বিভক্ত করে সেইসব এলাকার ভূমি মালিকদের কাছ থেকে রাজস্ব কর আদায় করত আর সেটাই হচ্ছে খাজনা নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে অর্থনীতিতে ভূমি বলতে শুধুমাত্র মাটিকেই বা জমিকে বোঝায় না। বরং সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদকেই অর্থনীতিতে ভূমি বোঝায় কারণ যার যোগান সীমাবদ্ধ।
তবে এই সীমাবদ্ধ যোগান বিশিষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদকেই বা সম্পদ হতে সম্পদের মালিক কে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাই হল অর্থনীতিতে খাজনা বলে পরিচিত হয়। তবে অর্থনীতিতে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নানাভাবে খাজনার সংজ্ঞা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। এদের মধ্যে আমরা দুই একজনের সংজ্ঞা আপনাদেরকে দেখাতে পারি যে তারা অর্থনীতিতে খাজনা বলতে কি বুঝিয়েছেন বা কাকে বুঝিয়েছেন।
এদের মধ্যে আমরা প্রথমে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মার্শাল কি বলেছেন সে সম্পর্কে বলতে পারি। তিনি বলেছেন যে, “ভূমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা হতে যে আয় হয় তাকে খাজনা বলে।”
আবার আমরা আরেক অর্থনীতিবিদ ডেভিড রিকার্ড এর মতে খাজনার সংজ্ঞা কি সে সম্পর্কেও আপনাদের দেখানো যেতে পারে। মতে খাজনা হল যে,“ভূমির আদি ও অবিনশ্বর ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য উৎপাদনের যে অংশ ভূমির মালিককে প্রদান করা হয় তাকে খাজনা বলে।”
তবে আমরা আবার ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মতে খাজনার বিষয়টি একটু অন্যরকম ভাবে উঠে এসেছে বলে দেখতে পাই। এ সকল ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদের মতে ভূমির ব্যবহারের মূল্যই হল খাজনা। তারা মনে করতেন যে শুধুমাত্র ভূমির ক্ষেত্রেই খাজনা প্রদান প্রযোজ্য।
অর্থাৎ তারা বলতেন বমি হতে যে উদ্বৃত্ত আসে তাকেই খাজনা নামে অভিহিত করা যায়। কিন্তু আবার আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতে খাজনা শব্দটিকে তারা বিস্তৃত ব্যবহার বলেছেন, কারণ কোন সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রের মধ্যে এই খাজনা শব্দটি আটকে থাকতে পারে না। আজ না শব্দটিকে তারা বিস্তৃত অর্থেই ব্যবহার করেছেন। তাদের মতে শুধুমাত্র ভূমির ক্ষেত্রে নয় উৎপাদনের যেকোনো উপায় বা উপাদান হতে খাজনার উদ্ভব ঘটতে পারে।
তবে সেই সব উপকরণের যোগান সীমাবদ্ধ হতে হবে। মিসেস জোয়ান রবিনসন এর ভাষায় খাজনা সম্পর্কে বলা হয় যে, “উৎপাদনের কোন একক উপাদান কোন নির্দিষ্ট পেশায় একটি ন্যূনতম দামে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু যদি কখনো উক্ত উপাদানটি ঐ ন্যূনতম দামের অতিরিক্ত কিছু আয় করে তবে ঐ উদ্বৃত্ত আয়কে খাজনা বলা হয়।”
তাই আমরা দেখতে পাই উৎপাদনের সীমাবদ্ধ উপকরণসমূহ ব্যবহার করার জন্য তার মালিককে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে খাজনা নামে অভিহিত করা যেতে পারে। তাই অর্থনীতিতে দেখা গেল যে খাজনা শব্দটি যারা শুধুমাত্র কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ছোট কোনো বিষয়কে বোঝানো হয়নি। হাসনা শব্দটির অর্থ বিস্তৃত। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উপকরণ থেকে স্থায়ী ভাবে অস্থায়ীভাবে স্বল্পভাবে বা দীর্ঘভাবে বিভিন্ন ধরনের খাজনা প্রদান করা যেতে পারে মালিকগণকে।
তাই আজকে আমরা খাজনা কাকে বলে এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আপনাদেরকে জানানো হলো। তাই এ ধরনের বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে আপনারা অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। আমরা এই সংক্রান্ত সকল বিষয় নিয়েই বিভিন্ন ধরনের নিবন্ধন রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে। তাই সেসব চাইলেই আপনারা ভিজিট করে দেখে নিতে পারেন।